রমজানের রোজা সম্পর্কেগুরুত্বপূর্ণ কিছু হাদিস ।


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম । আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে রমজানের মোবারকবাদ। রমজান মাস অত্যন্ত ফযিলত পূর্ন একটি মাস। এ মাসে আমরা সকলেই নিজের পাপের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে আাই। । আর পাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। তাই আজ কে রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু হাদিস পোস্ট করলাম। আশা করি আপনার উপকারে আসবে। আর আপনাদের কিছু বলার থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন দয়া করে।





💟💟💟রমজানের রোজা সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুত্ব পূর্ন হাদীস....💟💟💟


১.🕋 নবীজি (সা.) এর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন,, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন,"" যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো একদম বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়।"" (বুখারী, মুসলিম)🕋


২.🕌 হযরত সাহ্ল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন,"" বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজা রয়েছে যার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ আর ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ""(বুখারী, মুসলিম) 🕌


৩. 🕍 হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, ""যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমযান মাসের রাতে এবাদত করে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। ""(বুখারী, মুসলিম) 🕍


৪. 🌃 রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, ""রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য। তবে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। রোজা (জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য) ঢাল স্বরুপ। তোমাদের কেউ রোজা রেখে অশ্লীল কথাবার্তায় ও ঝগড়া বিবাদে যেন লিপ্ত না হয়। কেউ তার সঙ্গে গালমন্দ বা ঝগড়া বিবাদ করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার। সেই মহান সত্তার কসম যার করতলগত মুহাম্মদের জীবন, আল্লাহর কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরীর সুঘ্রানের চেয়েও উওম। রোজাদারের খুশির বিষয় ২টি- যখন সে ইফতার করে তখন একবার খুশির কারণ হয়। আর একবার যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোজার বিনিময় লাভ করবে তখন খুশির কারণ হবে।"" (বুখারী)।🌃


৫. 🌆 হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, "রোজা এবং কোরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমজানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে)। ""(বায়হাকী)🌆


৬. 🌇হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ""যখন রমজানের প্রথম রাত আসে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই খোলা হয় না। বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই বন্ধ করা হয় না। এ মাসে এক আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, হে ভালোর অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে মন্দের অন্বেষণকারী! থামো। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে বহু ব্যক্তিকে দোযখ থেকে মুক্তি দেন। আর এটা এ মাসের প্রতি রাতেই হয়ে থাকে।"" (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)।🌇


৭.🌘 হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন,"" যখন রমজান মাস উপস্থিত হতো রাসুল (সা.) সমস্ত কয়েদিকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক প্রার্থনাকারীকে দান করতেন। (বায়হাকী) হাদিসের বইয়ে আরো পাওয়া যায়, নবী করীম (সা.) বলেছেন, কেউ যদি (রোজা রেখেও) মিথ্যা কথা বলা ও খারাপ কাজ পরিত্যাগ না করে তবে তার শুধু পানাহার ত্যাগ করা (অর্থাৎ উপবাস ও তৃষ্ণার্ত থাকা) আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।"" (বুখারী)🌖


৮. 🌜হযরত সালমান ফারসী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ""একবার রাসুল (সা.) আমাদের শাবান মাসের শেষ তারিখে ভাষণ দান করলেন এবং বললেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার করেছে এক মহান মাস, মোবারক মাস। এটি এমন মাস যাতে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তায়ালা এই মাসের রোজাগুলোকে করেছেন (তোমাদের ওপর) ফরজ আর রাতে নামাজ পড়াকে তোমাদের জন্য করেছেন নফল। এই মাসে যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে ১টি নফল আমল করল সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ১টি ফরজ আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি এই মাসে ১টি ফরজ আদায় করলো সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করলো। এটা ধৈর্য্যের মাস। আর ধৈর্য্যের সওয়াব হলো বেহেশত। এটা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। এটা সেই মাস যে মাসে মুমিন বান্দার রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তা তার জন্য গুনাহ মাফের এবং দোযখের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। এছাড়া তার ছওয়াব হবে রোজাদার ব্যক্তির সমান। অথচ রোজাদার ব্যক্তির সওয়াব কমবে না। এসব শুনে সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তো এমন সামর্থ রাখেনা যে রোজাদারকে (তৃপ্তি সহকারে) ইফতার করাবে? রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহ পাক এই ছওয়াব দান করবেন যে রোজাদারকে ইফতার করায় এক চুমুক দুধ দিয়ে, অথবা একটি খেজুর দিয়ে, অথবা এক চুমুক পানি দিয়ে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়ায় আল্লাহ তায়ালা তাকে হাউজে কাউছার থেকে পানি পান করাবেন যার পর সে পুনরায় তৃষ্ণার্ত হবে না জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত। এটা এমন পবিত্র মাসের প্রথম দিক রহমত, মাঝের দিক মাগফিরাত, আর শেষ দিক হচ্ছে দোযখ থেকে মুক্তির। যে ব্যক্তি এই মাসে আপন অধীনস্থ দাস-দাসীদের কাজের বোঝা হালকা করে দেবে মহান আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন এবং তাকে দোযখ থেকে মুক্তি দান করবেন। ""(বায়হাকী)🌛


৯. 💒""হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা এসেছে। তিনি বলেছেন, হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, অনেক রোজাদার ব্যক্তি এমন রয়েছে যাদের রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ব্যতিত আর কিছুই লাভ হয় না। আবার অনেক রাত জাগরণকারী এমন রয়েছে যাদের রাত জাগার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই লাভ হয় না। (নেক আমল যদি এখলাস ও আন্তরিকতার সঙ্গে না হয়ে লোক দেখানোর উদ্দেশে হয় তাহলে এর বিনিময়ে কোনো সওয়াব পাওয়া যায় না)। (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)""💒


১০🕋. হযরত আবু হুরায়রা (রা.) আরো বলেছেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন,"" যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে শরীয়ত সম্মত কোনো কারণ ছাড়া রমজানের একটি রোজাও ভাঙে সে রমজানের বাইরে সারাজীবন রোজা রাখলেও এর বদলা হইবে না।"" (তিরমিযী, আবু দাউদ)🕋


১১. 🕌হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ""তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না, ১. রোজাদারের দোয়া ইফতার করা পর্যন্ত, ২. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর দোয়া, ৩. মাজলুমের দোয়া। আল্লাহ তায়ালা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপর উঠিয়ে নেন এবং এর জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। আর আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! বিলম্বে হলেও আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব।"" (মুসনাদে আহমাদ হাদিস : ৯৭৪৩, জামে তিরমিযি হাদিস ৩৪২৮, ইবনে মাজাহ হাদিস : ১৭৫২)🕌


১২.🎆 হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ""আল্লাহ তাআলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমযানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমযান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।""-মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৮৩৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস-৮৯৬৮, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস-১৮৮৪, তাবারানী হাদীস-৯০০৪, বাইহাকী শুয়াবুল ঈমান, হাদীস-৩৩৩৫🎆


১৩. ♥ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘""রোযা এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা মেটানো থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন দু’জনের সুপারিশই গ্রহণ করা হবে।-""মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৬৫৮৯; তবারানী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/৪১৯ ♥


১৪. 🌋""ইতিকাফ হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে পালিত জিবরীল আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। জিবরীল আ. প্রতি রমজানেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কুরআন শুনাতেন এবং নিজেও তাঁর থেকে শুনতেন। আর যে বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াফাত হয় সে বছর তিনি দু’বার কুরআন শুনান এবং শোনেন"" (বুখারী ও মুসলিম)।🌋


১৫. ‘🌃🌃""রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক দানকারী ছিলেন, তবে তিনি সবচে’ বেশি দান করতেন যখন জিবরীল আ. তাঁকে কুরআন শুনাতেন। আর জিবরীল আ. রমজানের প্রতি রাতেই তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁকে কুরআন শেখাতেন। যখন জিব্রিল আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি বেগবান বাতাস থেকেও অর্থকড়ি ব্যয়ের ক্ষেত্রে অধিক দানশীল হতেন"!’ (বুখারী ও মুসলিম)।🌃🌃


১৬. 🏜🏜""রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিকাফ করা কখনো বাদ দেননি। তিনি প্রতি বছর দশ দিন ইতিকাফ করতেন। আর যে বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াফাত ফরমান, সে বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন। উপরন্তু যখন তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতে প্রতিযোগিতা শুরু করলেন, তিনি ইতিকাফ করা ছেড়ে দিলেন এবং তা শাওয়ালের প্রথম দশকে কাজা করে নিলেন ""(বুখারী)।🏜🏡



















EmoticonEmoticon